কিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিনের চাহিদার কথা বারবার উঠে আসছিলো। কিন্তু ছেলে স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষে কিভাবে এই ট্যাবু ভাঙা সম্ভব? নিরাপত্তার অভাবে এখনো কোন মেয়ে স্বেচ্ছাসেবককে সেখানে পাঠানোর সাহস করি নি। এই অবস্থায় এগিয়ে আসেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী উর্মিলা আপু (Urmila Srabanti)। তিনি দায়িত্ব নেন স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্পন্সর এবং বিতরণের। ব্যস্ত শিডিউলের ফাঁকে তিনি এর আগেও বিদ্যানন্দের রান্নাঘরে কাজ করেছেন। সবজী কাটাকুটিতে যেমন তিনি পন্ডিতি দেখিয়েছেন, তেমনি খাবার ঝুড়ি নিয়ে রাতের আঁধারে অভুক্ত মানুষকে অবাক করেছেন।
ঝুঁকির কথা মাথায় থাকলেও তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল কক্সবাজার পৌঁছান, সেখান থেকে সরাসরি চলেন আমাদের অস্থায়ী রান্নাঘরে। রান্না, প্যাকেজিং এবং গাড়ি লোডিং শেষে আমাদের ভাঙা গাড়িতেই রওনা দেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। সেখানে জীর্ণ ঘরের কিশোরী কন্যাদের সাথে কথা বলে তুলে দেন সেনিট্যারি ন্যাপকিন। এখানে তিনি দায়িত্ব শেষ করলেন না, নেমে পড়েন খিচুড়ি বিতরণে। এভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করে যান স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে। আর যাওয়ার আগে স্বীকার করেছেন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের অমানুষিক পরিশ্রম এবং ধারাবাহিক ত্যাগের কথা। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রিয় কোন অভিনেত্রীর এভাবে ব্যস্ত শিডিউল ফেলে তাঁদের সাথে কাজ করতে ছুটে আসাটা।
উর্মিলা আপুকে বাহবা দিতে লেখাটি লিখি নি, উনার চেয়ে বহুগুণে কষ্ট বেশী করছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা। লিখেছি সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত মানুষদের জন্য, আপনারা অনেকেই অনেকের জন্য রোল মডেল। আপনাদের চুলের স্টাইল যেমন কপি হয়, তেমনি অনুসরণ হয় ভালো-মন্দ অভ্যাসগুলো। আপনরা যদি আজকে একটা ভালো কাজের উদাহরণ সৃষ্টি করেন, তবে আগামীকাল হয়তো অনেকগুলো ভালো কাজ বাংলাদেশ দেখবে আপনার ফলোয়ার থেকে। একই সাথে নতমস্তকে অনুরোধ থাকবে লোক দেখানো কাজ কিংবা ছবি তোলার উপস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার, যা সত্যিকারের স্বেচ্ছাসেবকদের হতাশ করে।
শেষ করছি আরেকজনের কথা বলে। গত মাসে এক টিভি ব্যক্তিত্ব অফিসে ডেকে এক লাখ টাকা তুলে দেয়ার সময় দ্বিতীয় কাউকে পাশে রাখেন নি, এমনকি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগও রাখেন নি। আছেন কিছু ভালো মানুষ এখনো, নয়তো কিভাবে টিকে আছে এই সভ্যতা?
[স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয় সাধারণত আমরা প্রকাশ আমরা করি না, শুধুমাত্র অন্যকে অনুপ্রাণিত করতে এই নিয়মের বাইরে আসা হয়। আর দুঃখিত ভালো ক্যামেরা ছিলো না সুন্দর ছবি তোলার, আর সময় বা কই?]
ফেইসবুক পেইজ এক টাকায় আহার – 1 Taka Meal